Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

মুক্তিযুদ্ধে মদন

অধিকার আদায়ে বীরদর্পে গর্জে ওঠা বা আন্দোলনে ঝাপিয়ে  পড়া বাঙালি জাতির পুরানো ইতিহাস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে আন্দোলন, লড়াই একটি বড় ঐতিহ্য। তারই ধারাবহিকতায় ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও যুদ্ধে মেতে উঠেছিল বাঙালীরা।

          বাংলাদেশ আবিচ্ছেদ্য অংশ নেত্রকোণার স্বাধীন চেতা জনগোষ্ঠী ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিতাসিক ভাষণের সারংশ শুনেই অনুধাবন করতে পেরেছিল তাদের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে যেতে হবে। তাই মুক্তিযুদ্ধের জন্য নেত্রকোণাবাসীকে প্রস্তুতি গ্রহণে বেশি সময় ব্যয় হয়নি। ৭ মার্চ এর পর থেকেই নেত্রকোণার প্রত্যেক থান শহরগুলোতে যুদ্ধে যাবার জন্য যুব সমাজ উদগ্রীব হয়ে ওঠে। প্রতিদিন থানা পর্যায়ে গ্রামগুলো থেকে হাজার হাজার মানুষ সশস্ত্র মিছিল করে আসতে থাকে। নেত্রকোণা শহরসহ থানা শহরগুলোর রাজনৈতিক প্রজ্ঞাবান মানুষগুলোও নীতি নির্ধারণের কাজ শুরু করে দেয়। 

 

২৮ আগষ্ট মদন থানা সদরের যুদ্ধ ছিল অত্রাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য রণক্ষেত্র। মদন থানা সদর ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে। এক প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা মদন দখল করে সমগ্র ভাটি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছিল। সে অবস্থায় পাক হানাদাররা মদন আক্রমণের পরিকল্পনা নেয়। এরা কেন্দুয়া থেকে গুগবাজার, কাইটাইল পথে মদন অভিমোখে যাত্রা করেছিল। কাইটাল হয়ে বাহেরাখলা নদী অতিক্রম করার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পাক হানাদারদের আগমণ সংবাদ পৌঁছে যায়। পাক হানাদাররা ওই দিন বিকেল আনুমানিক ৪টার দিকে জাহাঙ্গীরপুর হাই স্কুল মাঠে অবস্থান নেয়। জাহাঙ্গীরপুর ও মদন থানা সদরের মাঝখানে মগড়া নদী। মুক্তিযোদ্ধারা ওঁৎপেতে বসেছিল কখন পাক সৈন্যরা নদী পাড়ি দেবে। বিকেল ৪টার পরেই পাক সৈন্যরা নৌকাযোগে মগড়া নদী পাড়ি দেবার জন্য চেষ্টা করে। নৌকা নদীর মাঝখানে আসতেই মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে পড়ে। এলএমজি-র ব্রাশ ফায়ারে নৌকায় আরোহী পাক হানাদাররা পানিতে তলিয়ে যায়। কয়েকজন আত্নরক্ষা করে ফিরে যায়। সে সময় ৫ জনের মুক্তিযোদ্ধা দল জাহাঙ্গীরপুর হাইস্কুল মাঠে অবস্থানরত পাক সৈন্যদের কয়েক’শ গজ দুরে অবস্থান গ্রহন করে। নদী থেকে ফিরে আসা পাকবাহিনীরা জাহাঙ্গীরপুর হাই স্কুল মাঠ অবস্থানরত সঙ্গে একত্রিত হওয়ার পরই মুক্তিযোদ্ধাদের ৫জনের দলটি  দ্বিতীয় আক্রমণ রচনা করে। সে সময় পাক সৈন্যদের বেশ ক’জন নিহত হয়েছিল। ৫ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষুদ্র দলটি নদী অতিক্রম করে মদন থানা সদরে মূল প্লাটুনের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল। মগড়া নদীকে মাঝখানে রেখে সারা রাত যুদ্ধ চলে।

          ঊভয়পক্ষের অবিরাম গোলাবর্ষণ সমগ্র অঞ্চলটি রণাঞ্চলের অংশে পরিণত হয়ে পড়েছিল। পরদিন অর্থাৎ ২৯ আগষ্ট মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে সকাল ৮টার দিকে পাক সৈন্যরা মগড়া নদী পাড়ি দিয়ে থানা সদরে প্রবেশের চেষ্টা করে। নৌকাযোগে পাক হানাদাররা পুনরায় মালনী পাড়া দিয়ে যাবার সময় নদীর মাঝপথে থাকতেই মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে। এলএমজি-র আক্রমণে পাকরাহিনীর নৌকা পানিতে ডুবে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির আঘাতে ও সাতাঁর না জানা অনেক পাক সৈন্য নিহত হয়। এতে পাক হানাদাররা মনোবল হারিয়ে ফেলে। সে সংবাদে পাক হানাদারদের সহযোগিতায় বেলা ১টার দিকে একটি হেলিকপ্টার আসে। হেলিকপ্টার থেকে পাক হানাদাররা অবিরাম গোরাবর্ষণ করতে থাকে। এতে আহত হয় আইয়ুব আলী ও জাহেদ। হেলিকপ্টার থেকে করা গুলিতে মারাত্নক আহত হয় প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল কুদ্দুছ। অত্যাধিক রক্তক্ষরণে রাত সাড়ে ৮টায় শহীন হন প্লাটুন কমান্ডার, হাঁসকুলি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুছ। সে অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পশ্চাদপসরণ ছাড়া অন্য কোন পথ ছিল না। পাকহানাদাররা সাময়িক ভাবে সে সময় মদন থানা সদর দখল করে নেয়। 

 

পাক হানাদারদের তান্ডবলীলায় মদনের অনেক সাধারণ মানুষের ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। অনেক মুক্তিযোদ্ধা মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করতে সম্মুখ সমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকের কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করা হয়নি। অনেক শহীদের নাম সংগ্রহও সম্ভব হয়নি যা পাওয়া গেছে সে তথ্যের আলোকে নিন্মে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের একটি প্রাথমিক তালিকা দেওয়া হল যাদের রক্তে আজ আমরা স্বাধীনতা পেয়েছিঃ

ক্রমিক নং

শহীদের নাম পিতা/গ্রাম/থানা

যে স্থানে শহীদ হন

তারিখ

৩৬

নিজাম উদ্দিন বীর প্রতীক

পিতা- সাইফুদ্দিন আহমেদ খান (ই.পি.আর)

গ্রাম- ছত্রকোণা

থানা- মদন

রংপুর যুদ্ধে

-

৩৭

আব্দুল কুদ্দিছ

পিতা- একদিল হোসেন

গ্রাম- হাসকুলী

থানা- মদন

মদনযুদ্ধে

২৯ আগষ্ট

৩৮

মোহাম্মদ আলী কাজল

পিতা- মোফাজ্জল হোসেন তাং

গ্রাম- মোনোহরপুর

থানা- মদন

ধানুয়া কামালপুর যুদ্ধে

অজ্ঞাত

৩৯

মফিজ উদ্দিন

পিতা- আব্দুল মজিদ

গ্রাম- কাইটাল

থানা- মদন

তাহেরপুর থানা যুদ্ধে

অজ্ঞাত

৪০

আব্দুল গফুর

পিতা- আব্দুল মোত্তালিব

গ্রাম- গোবিন্দ শ্রী

থানা- মদন

তারাইল  থানা যুদ্ধে

অজ্ঞাত

৪১

আব্দুর রাজ্জাক

পিং নবী হোসেন তাং

গ্রাম- আলম শ্রী

থানা- মদন

ফতেপুর ধলা যুদ্ধে

অজ্ঞাত

৪২

ছিদ্দিকুর রহমান

পিতা- সিরাজ আলী

গ্রাম- আলম শ্রী

থানা- মদন

-

অজ্ঞাত

৪৩

আব্দুস সাত্তার (ই.পি.আর)

পিতা- আব্দুল বারী

গ্রাম- তালুককানাই

থানা- মদন

-

২৯ সেপ্টেম্বর

৪৪

কাশিরাজ

পিতা- যতীন্দ্র নাথ ছিরালী

গ্রাম- মহড়া

থানা- মদন

আখাউড়া যুদ্ধে

অজ্ঞাত